রমাযান, উদ্দেশ্য, দায়িত্ব ও কর্তব্য

কিভাবে কাটাবেন মাহে রামাযান❓
🖊️
শাইখুল ইসলাম মুফতী তাক্বী উসমানী দা.বা. 
↘️ 
মাহে রামাযান এক বিশাল নেয়ামত: 
রামাযান মাস আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে এক মহান নেয়ামত। এ মাসের প্রকৃত মর্যাদা ও তাৎপর্য আমরা উপলব্ধি করব কিভাবে? আমরা তো দিন-রাত দুনিয়ার কাজে নিমগ্ন থাকি। সকাল থেকে সন্ধ্যা দুনিয়ার পিছনে ছুটি। বস্তুবাদের ফাঁদে আমরা আটকে গেছি। তাই আমরা কিভাবে বুঝব রমযান কী? আল্লাহ যাদেরকে অনুগ্রহ করেন, রমযানের নূর ও বরকত ধারা যারা বুঝেন, তারাই উপলব্ধি করেন এ মাসের প্রকৃত মর্যাদা। আপনি নিশ্চয় শুনে থাকবেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজবের চাঁদ দেখার পর থেকেই পাঠ করতেন এ দোয়া
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْ رَجَبَ وَ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَان
‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শা’বান মাস বরকতময় করুন। আমাদেরকে রমযান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দিন। -মাজমাউয্যাওয়ায়েদ ২ : ১২৫
একটু ভাবুন! স্বয়ং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই মাস আগ থেকেই এই রমযান মাসের অপেক্ষা করতেন। এ মাসটি ভাগ্যে জোটার জন্য আল্লাাহর দরবারে সবীনয়ে প্রার্থনা করতেন।  
↘️
বয়স বৃদ্ধির প্রার্থনা: 
এক হাদীস থেকে বোঝা যায়, আল্লাহর সন্তুষ্টি মাফিক চলার উদ্দেশ্যে নিজের দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া করা দূষণীয় নয়; বরং তা এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তাই এ দোয়া করা উচিত, হে আল্লাাহ! আমার এ পরিমাণ বয়স বাড়িয়ে দাও যেন আমি তোমার মর্জি মাফিক আমল করতে পারি এবং তোমার দরবারে হাজিরা দেয়ার সময় যেন তোমার সন্তুষ্টি লাভ করতে পারি। 
কিন্তু আমাদের সমাজে কিছু লোক আছে, যারা এর উল্টোটা চায়। তারা বলে, হে আল্লাহ! এখন আমাকে এ দুনিয়া থেকে নিয়ে যাও। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জাতীয় দোয়া থেকে বারণ করেছেন। কারণ, দুনিয়ার দুরাবস্থা দেখে হয়ত তুমি মৃত্যু কামনা করছ, তোমার ধারণা মৃত্যু তোমাকে মুক্তি দেবে। কিন্তু একটি বারের জন্যও কি ভেবে দেখেছ- আখেরাতের জন্য কি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছ? এখন তোমার ইন্তেকাল হলে তোমার আখেরাত সুখময়ী হবে; এর নিশ্চয়তা আছে তোমার কাছে? কাজেই দোয়া মৃত্যুর নয়; বাঁচার জন্য করতে হবে। যতদিন আল্লাহ হায়াতে রেখেছেন ততদিন তাঁর মর্জি মাফিক চলার জন্য দোয়া করবে। 
↘️
জীবন সম্পর্কে রাসূল সা.'র দোয়া: 
এ জন্যই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন এভাবেÑ
اَللَّهُمَّ أَحْيِنِيْ مَا كَانَتْ الحَيَاةُ خَيْرًا لِيْ وَ تَوَفَّنِيْ إِذَا كَانَتِ الوَفَاةُ خَيْرًا لِيْ (مسند أحمد ৩: ১০৪)
হে আল্লাহ! যতদিন জীবন আমার জন্য কল্যাণময়, ততদিন আমাকে জীবিত রাখুন। আর যখন মৃত্যু হবে আমার জন্য মঙ্গলময় তখন আমাকে তুলে নাও। সুতরাং কল্যাণময় জীবন কামনা করতে কোনো অসুবিধা নেই। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রমযান পর্যন্ত হায়াত কামানা থেকে তা প্রমাণিত হয়। 
↘️ 
রামাযানের অপেক্ষা কেন?
প্রশ্ন হলো, রমযানের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এতটা অপেক্ষা কেন? কেন এত ব্যকুলতা? এর কারণ হলো, আল্লাহ তাআলা রমযানকে নিজের মাস হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আমাদের বুঝ স্থুল। তাই আমরা মনে করি রমযান মাসের বৈশিষ্ট হলো, এটা রোযার মাস। এতে কাজ হলো, কেবল রোযা রাখা এবং তারাবীহ নামায পড়া। 
বাস্তবতা হলো, এ মাসের তাৎপর্য এতটুকুতেই শেষ নয়। বরং রোযা, তারাবীহসহ রমযান মাসের যাবতীয় ইবাদত আরেকটি বিশাল বস্তুর প্রতীক। তাহলো, আল্লাহ তাআলা এ মাসটিকে নিজের মাস বলেছেন। যেসব লোক এগারো মাস পর্যন্ত ধন-সম্পদের নেশায় ডুবে ছিল, আমার থেকে দূরে সরে ছিল, দুনিয়ার ব্যস্ততায় এবং গাফিলতির অমানিশায় আচ্ছাদিত ছিল, আল্লাহ তাদেরকে এ মাসটি নৈকট্য লাভের জন্য দিয়েছেন। 
আল্লাহ তাদের উদ্দেশ্যে বলছেন, উদ্দাম, স্বাধীনতা ও অপরিমিত আনন্দের মাঝে এগারোটি মাস কাটিয়েছ, নিজের খেয়াল-খুশি মতো চলছ, দুনিয়ার মোহে পরে আমার থেকে অনেক দূরে চলে গেছ, এ মাসে আমার কাছে ফিরে আস, আমার নৈকট্য লাভ কর। কেননা এ মাস আমার সাথে সম্পর্ক স্থাপনের মাস। 
↘️ 
মাহে রামাযানে করণীয়: 
মাহে রামাযানে রোযা রাখা ও তারাবীহ নামায পড়ার মাঝেই দায়িত্ব ক্ষান্ত হয় না। এ মাসে জিম্মাদারী আরো অনেক বেশি। আল্লাহ তাআলা একটি মাসকে মানুষের পবিত্রতা ও আত্মশুদ্ধির জন্য নির্ধারণ করেছেন। যেমন, কোনো মেশিন বা গাড়ি কিছু দিন চলার পর তাতে কিছু ময়লা-আবর্জনা জমে। তাই তার সার্ভিসিং করাতে হয়। আমাদের জীবনের মেশিনও এগারো মাসের ব্যস্ততায় ময়লা-আবর্জনায় ভরে যায়। তাতে মরীচিকা পড়ে যায়। আল্লাহ তাআলা এ মাস দিয়েছেন, যাতে এর মাধ্যমে আমরা ময়লা-আবর্জনা দূর করতে পারি। 
↘️ 
মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য: 
আল্লাহ তাআলা আমাকে ও আপনাকে কেন দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন তার উদ্দেশ্য সূরা যারিয়াতে পরিষ্কার বলে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
অর্থাৎ আমি জিন ও মানুষকে শুধু এ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছি, তারা আমার ইবাদত করবে। 
-সূরা যারিয়াত : ৫৬
↘️
ফেরেশতা কি ইবাদতের জন্য যথেষ্ট নয়? 
কেউ যদি মনে করে, ইবাদত করার জন্য তো আল্লাহ তাআলা আগে থেকেই ফেরেশতা সৃষ্টি করে রেখেছেন। সুতরাং এ উদ্দেশ্যে মানুষ সৃষ্টির প্রয়োজন কি ছিল? এর উত্তর হলো, ফেরেশতাদেরকে ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করা হলেও, তাদের ইবাদত স্বভাবজাত। তাদেরকে সৃষ্টিই করা হয়েছে এমনভাবে, তারা গুনাহ এবং আল্লাহর নাফরমানী করার ক্ষমতা রাখেন না। তারা সৃষ্টিগতভাবেই আল্লাহর ইবাদত করতে বাধ্য। তাই তাদের জন্য ইবাদত করা সহজ। পক্ষান্তরে মানুষকে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন এমনভাবে, তার গুনাহ ও ইবাদত দু’টি করারই ক্ষমতা আছে। এরপর বলা হয়েছে, ইবাদত কর। তাই তাদের জন্য ইবাদত করা কঠিন। 
একইভাবে মানুষের মাঝে প্রবৃত্তি তাড়না আছে, আবেগ আছে, অনুভুতি আছে, লোভ-লালসা আছে, প্রয়োজন আছে, আরো আছে গুনাহর প্রতি আকর্ষণ। এরপর হুকুম করা হয়েছে গুনাহর এসব আবেদনকে উপেক্ষা করে, আবেগ ও আকর্ষণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং গুনাহর কামনা-বাসনা দলিত করে আল্লাহর ইবাদত কর।  
যাইহোক, বাহ্যত এ আয়াতের দাবি হলো পৃথিবীতে মানুষ আল্লাহর ইবাদত ছাড়া অন্য কোনো কাজ করবে না। খাবে না, পান করবে না, ব্যবসা-বাণিজ্য করবে না, ঘুরা-ফেরা করবে না। সর্বক্ষণ ইবাদতে মশগুল থাকবে। 
অপর এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনÑ
إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল খরিদ করে নিয়েছেন। এর বিনিময়ে তাদেরকে জান্নাত দিবেন। -সূরা তাওবা : ১১১
আল্লাহ জান ও মালের যেন এক বিশাল মূল্য দিয়েছেন। নিয়ম হলো, পণ্য ও মূল্যের মাঝে মিল থাকা। কিন্তু এ পণ্যের মধ্যে বাহ্যত সে মিল ও ভারসাম্যতা পরিলক্ষিত হয় না। কেননা আখেরাতের চিরস্থায়ী নিয়ামতের মোকাবেলায় মুসলমানের জান ও মালের কোনো তুলনাই হতে পারে না। এ যেন হিরার বিনিময়ে মাটির ঢিলা ক্রয়। 
↘️ 
জান্নাতে ভয়-ভীতি ও চিন্তা-ভাবনা থাকবে না: 
কেননা জান্নাত এবং তার চিরস্থায়ী নিয়ামতসমূহ এমন, আজ পর্যন্ত কোনো অন্তরে তার ধারণা ও কল্পনা পর্যন্ত সৃষ্টি হয়নি। সে সকল নিয়ামত থেকে শুধু একটি নিয়ামতের কথা চিন্তা করুন। যাকে কুরআনুল কারীম এভাবে বর্ণনা করেছেন,
لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
অর্থাৎ জান্নাতে যাওয়ার পর মানুষের কোনো ধরনের ভয়-ভীতি এবং চিন্তা-পেরেশানী থাকবে না। -সূরা ইউনূস : ৬২
শুধু একটি নিয়ামতের ব্যাপারে চিন্তা করলেই দেখা যাবে সারা পৃথিবীর সমস্ত নিয়ামত তার সামনে তুচ্ছ। কেননা দুনিয়ার যে আরাম-আয়েশ ও ভোগ-বিলাশ রয়েছে। তাতে ভয়-ভীতি বা   চিন্তা-পেরেশানী আছেই। আপনি যত উন্নত খাবারই খান না কেন এবং সবচেয়ে সেরা বাহনে আরোহন করেন কিংবা সর্বোৎকৃষ্ট পোশাক পরেন না কেন তাতে নিজেকে ভয়-ভীতি ও চিন্তা-পেরেশানী মুক্ত রাখতে পারবেন না। 
এ দুনিয়ার নিয়মই হলো, এখানের সকল আনন্দের সহিত দুঃখ-বেদনার কোনো না কোনো কাটা জড়িয়েই আছে। জান্নাতে সকল নিয়ামতের উপস্থিতিতে আল্লাহ তাআলা এমন একটি নিয়ামত দান করবেন, না অতীতের কোনো বিষয়ের ভয় থাকবে, না ভবিষ্যতে কোনো আশংকা থাকবে। 
আল্লাহ আমাদের প্রাণ খরিদ করে এক বিশাল মূল্য নির্ধারণ করেছেন। অতএব আমাদের জান হলো বিক্রিত পণ্য। তার বিক্রয়চুক্তি সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। এখন আর সেটা আমার অধিকারে নেই। যিনি জান খরিদ করেছেন তার অধিকার ছিল তিনি সারা দিন তার সিজদায় পড়ে থাকার হুকুম করবেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্য আর কোনো কাজ করা যাবে না। 
↘️
আল্লাহ তাআলা কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করেছেন:
আমাদের জান খরিদকারী হলেন আরহামুর রাহিমীন। এত চড়া মূল্যে জান কিনেও তিনি তা আমাদেরকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। দুনিয়ার সকল কাজ-কর্ম করার অনুমতি দিয়েছেন। শুধুমাত্র অল্প কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করেছেন। তা গ্রহণ করলেই চলবে। দিনে পাঁচবার তাঁর দরবারে হাজিরা দিতে হবে। নিজের সম্পদ যেভাবে ইচ্ছা খরচ করবে। বছরে কেবল শতকরা আড়াই পার্সেন্ট গরীবদেরকে দিতে হবে। কিছু হালাল ও হারামের ফিরিস্তি বলে দিয়েছেন, এসব জিনিস হারাম। এর থেকে বেঁচে থাকবে। আর এসব জিনিস হালাল, তা গ্রহণ করবে।
↘️
সকল বৈধ কাজ ইবাদত: 
এরপর আরো মজার বিষয় হলো, আল্লাহ তাআলা শুধু জান ফেরত দিয়ে আর শুধু প্রয়োজনীয় কাজকে বৈধ করে ক্ষান্ত করেননি; বরং তিনি বলে দিয়েছেন, তোমরা নিজ প্রয়োজনে যে কাজ-কর্ম করÑ তাও যদি আমার নাম নিয়ে কর, তা ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত হবে। 
খানা সকল মানুষই খায়। কিন্তু যদি বিসমিল্লাহ বলে শুরু করে এবং আলহামদুলিল্লাহ বলে শেষ করে। আর এই মনে করে খানা খায়, এটা আমার প্রতিপালকের নিয়ামত। তবে এই খানা গ্রহণ কেবল জায়িযই নয়; ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত হবে। এতে সওয়াব লাভ হবে। 
এমনিভাবে সকলেই ঘুমায়। কিন্তু শয়নকালে যদি এ দোয়াপাঠ করে
أللهم بإسمك أموتُ و أحيا
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমারই নামে আমার মরণ ও জাগরণ। জাগ্রত হওয়ার পর এতটুকু পড়ে নিবেÑ
الحمد لله الذي أحيانا بعد ما أماتنا و إليه النشور
শুধু এতটুকু কাজ করবে তাহলে ৬/৭ ঘন্টার ঘুম, যা ছিল নিজের জানের আরামের জন্য। শুরু ও শেষে আল্লাহর নাম আসার কারণে এই শয়নও ইবদতে পরিণত হয়ে যাবে। 
জীবিকা উপার্জনের জন্য বের হলে এ নিয়তে বের হবে, আমার পরিবার-পরিজনের আমার ওপর হক রয়েছে; তা পুর্ণ করার জন্য আল্লাহর বিধান মোতাবেক ব্যবসা বা চাকরী করব। তখন এ ব্যবসা এবং চাকরী কেবল জায়িযই হবে না; বরং শ্রেষ্ঠত্বের কারণ হবে। ইরশাদ হচ্ছে
التاجرُ الصدوقُ الأمينُ مع النبيينَ و الصِّدِّيقينَ و الشُّهَداءِ
অর্থাৎ সত্যবাদী ও আমনতদার ব্যবসায়ীকে কেয়ামতের দিন নবী, সত্যবাদী ও শহীদদের সাথে উঠানো হবে। -তিরমিযী ১/১৪৫
মোটকথা, দুনিয়াতে এমন কোনো কাজ নেই যা সামান্য এদিক-সেদিক করে তা আমরা ইবাদতে পরিণত করতে পারব না। 
↘️
এক সাহাবীর প্রশ্ন: 
একবার এক সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, স্বামী-স্ত্রীর মিলনেও কি সওয়াব হয়? তখন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাতেও সওয়াব হয়। কেননা তোমরা জায়িয ও বৈধ পন্থায় জৈবিক চাহিদা পূরণ করছ। তাই তাতে সওয়াব পাবে। সাহাবী বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাাহ! আমরা তো নিজেদের প্রবৃত্তির চাহিদা পুরণ করছি! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যদি এই চাহিদা অবৈধ পন্থায় পূর্ণ করতে তবে কি গুনাহ হত না ? কিন্তু যখন আল্লাহ তাআলার অনুমোদিত পন্থায় তা পূর্ণ করলে তাই তাতে সওয়াব পাবে। -মুসনাদে আহমাদ ৫/৭
এমনকি টয়লেটে যাওয়া এবং সেখান থেকে বের হওয়াও ইবাদতে গণ্য হতে পারে। টয়লেটে প্রবেশের পূর্বে হাদীসে বর্ণিত দোয়া।
اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ
صحيح مسلم ، كتاب الحيض ، باب ما يقول إذا أراد دخول الخلاء ১॥২৮৩
আর বের হওয়ার সময় غفرانك বলবে। এতে করে যত সময় সেখানে কাটিয়েছে তাতে সওয়াব লাভ হবে। বলা যায়, এমন কোনো কাজ নেই যা আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য ইবাদত বানাননি। এটা আল্লাহ তাআলার কত বড় দয়া, মানুষ চাইলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিটা মুহূর্ত নিজের জন্য ইবাদতে পরিণত করতে পারে। 
↘️ 
ইবাদত দুই প্রকার: 
তবে এখানে একটি বিষয় বুঝার আছে। যখন পানাহার, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি বৈধ পন্থায় করলে তা ইবদতে পরিণত হতে পারে তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্য আর নামাযের মধ্যে পার্থক্য কি? অনুরূপ যিকির ও খাওয়া-দাওয়ার মাঝে পার্থক্য কি রইল? দু’টিই তো ইবাদত। এ দু’টির মাঝে পার্থক্য খুব ভালোভাবে বুঝা দরকার। এই পার্থক্য না বুঝার কারণে অনেকে বিভ্রান্তির শিকার হন। 
ইবাদত দুই প্রকার। এক. [ফরৎবপঃ] ডাইরেক্ট বা সরাসরি ইবাদত। দুই. [রহ ফরৎবপঃ] ইনডাইরেক্ট বা পরোক্ষ ইবাদত।
↘️ 
সরাসরি ইবাদত: 
কিছু আমল এমন আছে যা সরাসরি ইবাদত। নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত, সদকা, কুরবানী, যিকির, তিলাওয়াত এসবই হলো সরাসরি ইবাদত। এগুলোর উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কিছু নয়। একারণেই কেউ যদি নামায পড়তে গিয়ে এ নিয়ত করে, আমি শারীরিক কসরত করছি, তবে তার নামাযই হবে না। কেননা এর উদ্দেশ্যই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। 
↘️ 
পরোক্ষ ইবাদত: 
দ্বিতীয় হলো, ঐ সকল বিষয় যা সরাসরি ইবাদত নয়। কিন্তু আল্লাহ তাআলা নিজ অনুগ্রহে সহীহ নিয়তের বরকতে তা ইবাদতে পরিণত করেন। আল্লাহ তাআলা মুমিন বান্দাদেরকে বলে দিয়েছেন, তোমরা পার্থিব কাজও যদি ভালো নিয়তে সীমারেখার ভেতর থেকে কর এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নত মোতাবেক কর তবে তাতেও আমি সেই সওয়াব দান করব যা সরাসরি ইবাদতে দান করি।
↘️ 
হালাল উপার্জন পরোক্ষ ইবাদত: 
যেমন বলা হয়েছে, তুমি যদি স্ত্রী-সন্তানের হক আদায় করার উদ্দেশ্যে বৈধ উপায়ে সম্পদ উপার্জন কর। আর নিয়্যত কর, আমার উপর স্ত্রী-সন্তান এবং নিজের যে হক রয়েছে তা আদায় করার জন্য উপার্জন করছি। তাহলে এই উপর্জনকেও আল্লাহ তাআলা ইবাদতে পরিণত করবেন। যদিও আসলে এই উপর্জন ইবাদতের জন্য ছিল না। তাই এটা সরাসরি ইবাদত নয়। পরোক্ষ ইবাদত। 
↘️
সরাসরি ইবাদতের সওয়াব বেশি: 
এটা স্পষ্ট, পরোক্ষ ইবাদতের তুলনায় সরাসরি ইবাদতের মর্যাদা বেশি। কেননা সরাসরি ইবাদতের বৈশিষ্ট্য হলো, তা আত্মিক উন্নতি এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্কের মাধ্যম হয়। পরোক্ষ ইবাদতের বিষয়টি ব্যতিক্রম। কেননা তাতে যদিও সওয়াব হয়, কিন্তু আত্মিকভাবে সেই উঁচু মাকাম লাভ হয় না, যা সরাসরি ইবাদতের মাধ্যমে অর্জিত হয়।
↘️ 
এক ডাক্তারের ঘটনা: 
কিছুদিন পূর্বে এক মহিলা আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, আমার স্বামী একজন চিকিৎসক। তার একটা ক্লিনিক আছে। তিনি রোগী দেখেন। রোগী দেখার চাপে সময় মতো নামায পড়েন না। রাতে যখন বাসায় ফিরেন, তখন এক সঙ্গে তিন ওয়াক্ত নামায আদায় করে নেন। আমি তাকে বলি, বাসায় এসে তিন ওয়াক্ত এক সাথে পড়েন কেন? ক্লিনিকে সময় মতো পড়ে নিন, যাতে নামায কাযা না হয়। তিনি উত্তরে বলেন, ক্লিনিকে আমি রোগী দেখি। এটা তো সৃষ্টির সেবা। সৃষ্টির সেবা এক মহান ইবাদত। এর সম্পর্ক বান্দার হকের সাথে। আর নামায তো হলো, ব্যক্তিগত বিষয়। তাই আমি রোগী দেখাকে প্রাধান্য দিই। আর নামায বাসায় এসে পড়ে নেই। মহিলাটি আমাকে প্রশ্ন করল, আমি আমার স্বামীর এই যুক্তির কি উত্তর দেব?
↘️
নামাযের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নেই: 
মহিলার স্বামীর এ দৃষ্টিভঙ্গি ভুল। তার বিভ্রান্তির কারণ হলো, তিনি দুই প্রকারের ইবাদতের মাঝে পার্থক্য বুঝতে পারেননি। কারণ, নামায হলো সরাসরি ইবাদত। এর ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তোমরা যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর মুখোমুখী থাকলেও নামায ছেড় না। যদিও সে অবস্থায় নামাযের পদ্ধতিতে কিছু শিথিল করা হয়েছে। কিন্তু নামায মাফ করা হয়নি। নামাযের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেনÑ
إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا (سورة النساء: ১০৩)
অর্থ : নিশ্চয় নামায মুমিনদের উপর ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। 
দেখুন, জিহাদের মতো মহান আমলের মধ্যেও নামায সময় মতো পড়তে বলা হয়েছে। নামাযের ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া হয়নি। 
↘️
সৃষ্টির সেবা দ্বিতীয় পর্যায়ের ইবাদত: 
এমনকি কেউ যদি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরে। কোনো কাজ-কর্ম করতে পারে না, তাকেও বলা হয়েছে, নামায অবশ্যই পড়তে হবে। এ অবস্থায়ও নামায মাফ হয় না। অবশ্য এতটুকু ছাড় দেয়া হয়েছে, দাড়িয়ে পড়তে না পারলে বসে পড়বে। বসে পড়তে না পারলে শুয়ে পড়বে। প্রয়োজনে ইশারা করে পড়বে। অযু করতে না পারলে তায়াম্মুম করবে। তবুও নামাায পড়তেই হবে। কেননা, এটা প্রত্যক্ষ ইবাদত। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ইবাদতের জন্যই। চিকিৎসক রোগী দেখেন। এটি সৃষ্টির সেবা। নিশ্চয় এটিও ইবাদত। তবে এটি সরাসরি ইবাদত নয়। বরং পরোক্ষ ইবাদত। তাই কোনো ক্ষেত্রে যদি এ দুই ধরনের ইবাদত সাংঘর্ষিক হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে সেক্ষেত্রে প্রথম প্রকারের ইবাদতকেই প্রাধান্য দিতে হবে ।
 ↘️ 
যেকোনে প্রয়োজনের তুলনায় নামায অধিক গুরুত্বপূর্ণ: 
দেখুন, আপনি যখন ক্লিনিকে বসেন তখন কিন্তু আপনাকে অন্য প্রয়োজনেও উঠতে হয়। পেশাব-পায়খানার জন্য টয়লেটে যেতে হয়। তখন তো রোগী রেখেই আপনাকে যেতে হয়। ধরুন, ক্ষুধা লেগে গেল তাহলে কি আপনি রোগী রেখে খানা খাওয়ার জন্য বিরতী গ্রহণ করবেন না?  
এসব কাজের জন্য রোগী রেখে যেতে পারলে, নামাযের জন্য গেলে কি সমস্যা হয়ে যাবে? এতে সৃষ্টির সেবায় এমন কি ক্ষতি হবে? অথচ নামায অপরাপর মানবিক প্রয়োজনের তুলনায় বহু গুরুত্ববহ। মূলত ইবাদতের তাৎপর্য ও তার প্রকারদ্বয়ের মাঝে পার্থক্য না বুঝার কারণে এই বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। 
↘️
পরোক্ষ ইবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য: 
পরোক্ষ ইবাদতের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, তাতে লিপ্ত হওয়ার পর সাধারণত মানুষ এতটা নিমজ্জিত হয়ে পড়ে, তার ইবাদতের দিকটা চাপা পড়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য এ জন্য শুরু করল যাতে নিজের অবশ্য পালনীয় হকগুলো আদায় করতে পারে। 
কিন্তু যখন বাজারে যায় এবং ব্যবসা শুরু করে তখন দেখতে পায় সেখানে বড় বড় ব্যবসায়ী বসে আছেন। টাকা দিয়ে টাকা হাসিলের অসংখ্য পথ খোলা রয়েছে। তখন এ টাকার খেলা দেখে চোখ উল্টে যায়। যার নূন্যতম প্রভাব এতটুকু হলেও পড়ে, যে উদ্দেশ্যে ব্যবসা শুরু করেছিল তা সাময়ীকভাবে হলেও ভুলে যায়। অথবা এর চেয়ে আগে বেড়ে যায়। সামান্য নাজায়িয কাজ হয়ে যায়। লোভ সৃষ্টি হয়, অমুক ব্যবসায়ী যেমন মাল কামাচ্ছে, আমিও কামাই। আর এ লোভের পেছনে পড়ে হালাল-হারামের তারতম্য হারিয়ে ফেলে। এটা ইনডাইরেক্ট ইবাদতে পরিণত হয়েছিল ঠিক কিন্তু এর প্রতি মনোযোগ এত বৃদ্ধি পেয়ে যায়, সে ব্যক্তি ব্যবসা সম্প্রসারে মশগুল হয়ে যায়। জামাত ছেড়ে দেয়। এক ওয়াক্তের নামায অন্য ওয়াক্তে পড়ে। তখন নামায আদায় করা হয় ঠিক, কিন্তু বোঝা মনে করে এবং আদবের প্রতি উদাসীনভাবে। ইনডাইরেক্ট ইবাদতের ফলাফল এই দাঁড়ায়, তার দ্বারা ডাইরেক্ট ইবাদতও পর্যদুস্ত হতে থাকে। মানুষের যে আধ্যাত্মিক উন্নতি হওয়ার কথা ছিল তাতে ভাটা পড়ে। তার আমল থেকে নূরানিয়াত এবং রূহানিয়াত শেষ হয়ে যায়। দুনিয়া কামানোর ধান্দা বেড়ে যায়। বস্তু নির্ভরতা বেড়ে যায়। [এবার মূল কথায় আসা যাক।]
↘️ 
এক মাস তোমাকে দিচ্ছি: 
আমরা এগারো মাস এভাবে কাটিয়ে দিয়েছি। আল্লাহর চেয়ে আমাদের মনের চাহিদা কে বেশি জানে? তিনি জানেন আমার বান্দা এ অবস্থায় এগারো মাস কাটিয়েছে, কখনো নামাযে ত্রুটি হয়েছে। কখনো অন্য ইবাদতে ত্রুটি হয়েছে। যার ফলে তার রূহানিয়াত কমে গিয়ে বস্তু প্রভাব বেড়ে গিয়েছে। আল্লাহ তাআলা এটা জেনে তার চিকিৎসা প্রদান করেছেন, এক মাস তোমাদেরকে দিলাম। তোমাদের রূহানিয়াতে যে ঘাটতি হয়েছে এবং বস্তু প্রভাব বেড়ে গিয়েছে, এ মাসে তার ক্ষতিপূরণ করে নাও। অন্তরে যে নাপাকী লেগেছে তা দূর করে নাও। অন্য ব্যস্ততা কমিয়ে সরাসরি ইবাদতে বেশি আত্মনিয়োগ কর। যখন এক মাস এভাবে কাটাবে তখন ইনশাআল্লাহ বাকি মাস কাটানো সহজ হয়ে যাবে। এ মাসে নিজের কাজ-কর্মের রুটিন তৈরি করে নিবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
অর্থ : হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরয করা হয়েছিলো, যাতে তোমরা বেঁচে যাও। -সূরা বাকারা : ১৮
বুঝা গেল, পানাহার থেকে বিরত থাকা আসল উদ্দেশ্য নয়। বরং রোযা ফরযের আসল উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন। এই মাস এ জন্য এসেছে যাতে বান্দা আসল জীবন তথা সরাসরি ইবাদতের দিকে ধাবিত হয়। এই মাস আসার আগে তার নিযামুল আওকাত তথা কাজের রুটিন এমনভাবে তৈরি করবে যাতে পার্থিব ব্যস্ততা কমিয়ে বেশির থেকে বেশি ইবাদতের প্রোগাম রাখবে। যাতে আধ্যাত্মিকভাবে উন্নতির স্তর বেশি থেকে বেশি অতিক্রম করা যায়। 
↘️ 
রামাযানকে স্বাগত জানানোর সঠিক পন্থা: 
আজকাল রমযানকে স্বাগত জানানোর নামে একটি পরিভাষা খুব প্রসিদ্ধি লাভ করছে। এটা আজ থেকে প্রায় বিশ বছর পূর্বে আমি মিসরে সর্বপ্রথম শুনেছিলাম। ঘটনাক্রমে শাবানের শেষের দিকে আমি মিসরে অবস্থান করছিলাম। সেখানে একটি বিশাল অনুষ্ঠান চলছিল। জানতে পারলাম প্রতি বছর ‘ইস্তেকবালে রমযান’ নামে এ অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এ জনসভায় বক্তৃতা, তিলাওয়াত এবং না‘তে রাসূল আবৃতি হচ্ছিল। 
‘ইস্তেকবালে রমযানের’ এ রসমি মাহফিল আল্লাহ জানেন, বিদ‘আতের আকৃতি ধারন না করে। কিন্তু ‘ইস্তিকবালে রমযানের’ আসল সুরত এই হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। হযরত সালমান ফারসী রা. বর্ণনা করেন, রমযানের একদিন আগে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে একত্রিত করে খুতবা দিলেন। হে মুসলমানগণ! তোমাদের ওপর বড় মহান ও বরকতময় মাস ছায়াস্বরূপ আসছে। তার গুরুত্বের প্রতি আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে বলেছেন। এ মাসে ফরযের প্রতি যতœবান হলে একটি ফরযের সওয়াব সত্তর ফরযের সমান হবে। আর নফলের সওয়াব ফরযের সমতুল্য হবে। [শুআবুল ঈমান]
এমনভাবে ইস্তিকবাল করবে যাতে এই মাসকে সর্বাধিক আল্লাহর ইবাদতে ব্যয় করা যায়। তখনই এই ইস্তিকবাল হবে প্রশংসনীয়।
↘️ 
দীনি মাদরাসাসমূহের বার্ষিক ছুটি: 
দীর্ঘদিন থেকে দীনি মাদরাসাগুলোতে রমযান মাসে বাৎসরিক ছুটির রেওয়াজ চলে আসছে। পনের শা’বান থেকে পনের শাওয়াল পর্যন্ত বার্ষিক ছুটি থাকে। আমাদের বুযুর্গানেদীন এটা করেছেন যেন পুরো রমযান মাস ইবাদতে কাটানো যায়। এমনিতে মাদরাসাগুলোতে সারা বছরের সেসব কর্মসূচী পালিত হয়, তার সবই ইবাদত। যেমন- কুরআন শিক্ষা, হাদীস ও ফিকহ ইত্যাদি শিক্ষা সবই ইবাদত। তবে যেহেতু এগুলো রমযানের রোযার মতো সরাসরি ইবাদত নয়, তাই আমাদের বুযুর্গানেদীন অন্য মাসে ছুটির ব্যবস্থা না করে রমযান মাসকে বার্ষিক ছুটি হিসাবে নির্ধারণ করেছেন, যেন পুরো মাসটি সরাসরি ইবাদতের মধ্যে কাটানো যায়। 
তাই রমযান মাসে যাদের ছুটি কাটানো সম্ভব তারা এ মাসেই ছুটি কাটাবে। নতুবা অন্ততপক্ষে ব্যস্ততা কমিয়ে নিবে।
↘️ 
মৌলভীর শয়তানও মৌলভী হয়: 
আমার পিতা হযরত মুফতী শফী সাহেব রহ. বলতেন, ‘মৌলভীদের শয়তানও মৌলভী হয়’। অর্থাৎ শয়তান মওলানা সাহেবদিগকে ইলমের সুরতে ধোকা দেয়। শয়তান তাদেরকে বলে, এগারো মাস পার্থিব কাজে নিমগ্ন থাকার বিষয়টি তো পাবলিকের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে। এটা তাদের ক্ষেত্রে প্রজোয্য যারা ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরী-বাকরী এবং দুনিয়ার ধান্নায় লিপ্ত ছিল। তোমরা তো এগারো মাস দীনের কাজেই ব্যয় করেছ। দীন শিক্ষা দিয়েছ। তাবলীগ করেছ। কিতাব রচনা করেছ। এসবইতো দীনি খেদমত। অথচ এটি হলো শয়তানের প্রবঞ্চনা। কেননা এগারো মাস পর্যন্ত আলেমগণ যে ইবাদত করেছেন তাহলো পরোক্ষ ইবাদত। এখন রমযান মাস হলো সরাসরি ইবাদতের মাস। এ মাসকে সরাসরি ইবাদতে ব্যয় করা উচিত।
একজন মুমিন বান্দার কর্তব্য হলো, রমযান আসার পূর্বেই একটি রুটিন তৈরি করে নেয়া। যেসব কাজ নগদ নয়, বরং পরবর্তীতে করার সুযোগ আছে, সেগুলোকে পিছিয়ে দিয়ে পুরো মাসটা কিভাবে ইবাদতের মধ্য দিয়ে কাটানো যায়, এ লক্ষ্যে তারাবীহ, তিলাওয়াত, যিক্রসহ বিভিন্ন আমালের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট রুটিন করে নেয়া চাই।
↘️
নিজ ব্যস্ততার হিসাব করবে: 
আমার পিতা আরো বলতেন, রমযান আসার পূর্বে নিজ ব্যস্ততার খোঁজ-খবর নাও। দেখো! কোনো ব্যস্ততা এমন আছে কি না যা বাদ দেয়া যায়। তবে তা বাদ দিয়ে ডাইরেক্ট ইবাদতের আমলে মশগুল হও। আর ফরয নামায-রোযার বাইরে নফলের প্রতিও যতœবান হবে। কেননা অন্য সময় নফলের তেমন সুযোগ হয় না। তাই কমপক্ষে রমযানে এর প্রতি যতœবান হওয়া উচিত। তাহাজ্জুদ নামাযের ব্যাপারে যত্মবান হও। কেননা তাহাজ্জুদ এমন একটি নিয়ামত, এর মিষ্টতা ও স্বাদ তারাই অনুভব করে যারা এর মূল্যায়ন করে। হযরত শায়েখ আবদুল কাদির জিলানী রহ. এর স্বাদ উপলব্ধি করেছেন। 
↘️ 
অর্ধ রজনীর বাদশাহী: 
হযরত শায়েখ আবদুল কাদির জিলানী রহ.-এর যুগে এক নওয়াব ছিলেন। তার ছোট্ট একটি রাজত্ব ছিল। নাম ছিল ‘নিম রোয’ [অর্ধ দিবস]। তিনি সীমাহীন ভক্তির ফলে নিজের সমগ্র রাজত্ব এবং জায়গীর হযরত শায়েখ রহ.-এর খেদমতে পেশ করেন। প্রতি উত্তরে হযরত শায়েখ রহ. তার নিকট একটি কবিতা লিখে পাঠান। যার মর্ম ছিলো, ‘যেদিন থেকে আল্ল

No comments:

Theme images by Maliketh. Powered by Blogger.