শাউওয়ালের ছয়টি সিয়াম সম্পর্কে পাঁচটি ফায়দা ও ২০টি মাস‘আলা
প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
রহমান রহীম আল্লাহ্ তায়ালার নামে-
লেখকঃ আব্দুল্লাহ মুহসিন আস-সাহুদ । অনুবাদক: সানাউল্লাহ নজির আহমদ । সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
শাউওয়ালের সিয়াম সম্পর্কে পাঁচটি ফায়দা:
ফায়দা-১
রমযানের সিয়াম শেষে শাউওয়ালের ছয়টি সিয়াম রাখলে পুরো বছর সিয়াম রাখার সাওয়াব হাসিল হয়। ইমাম মুসলিম সাহাবী আবু আইয়ূব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ صَامَ رَمَضَانَ وَأَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوّالٍ، كَانَ كَصِيَامِ الدّهْرِ».
“যে রমযানের সিয়াম রাখল, অতঃপর তার পশ্চাতে শাউওয়ালের ছয়টি (সিয়াম) রাখল, সেটাই হচ্ছে দাহর (তথা পূর্ণ বছরের) সিয়াম”।[1]
[ইমাম বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেছেন:
«وَإِنَّ بِحَسْبِكَ أَنْ تَصُومَ كُلَّ شَهْرٍ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ، فَإِنَّ لَكَ بِكُلِّ حَسَنَةٍ عَشْرَ أَمْثَالِهَا، فَإِنَّ ذَلِكَ صِيَامُ الدَّهْرِ كُلِّهِ ».
“… প্রত্যেক মাসে তিনটি সিয়াম রাখাই তোমার জন্য যথেষ্ট, কারণ প্রত্যেক নেকীর বিনিময়ে তুমি দশটি নেকী পাবে, আর এটাই পূর্ণ বছরের সিয়াম”।[2]
ইবন মাজাহ সহীহ সনদে সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ صَامَ سِتَّةَ أَيَّامٍ بَعْدَ الْفِطْرِ، كَانَ تَمَامَ السَّنَةِ، مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ، فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا».
“যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতরের পর ছয় দিন সিয়াম রাখবে তা পূর্ণ বছরের মত হবে, কারণ যে একটি নেকী নিয়ে আসবে তার জন্য তার দশগুণ”।[3]
ইমাম নাসাঈ সহীহ সনদে একই সাহাবী থেকে বর্ণনা করেন:
«جَعَلَ اللَّهُ الْحَسَنَةَ بِعَشْرٍ فَشَهْرٌ بِعَشَرَةِ أَشْهُرٍ وَسِتَّةُ أَيَّامٍ بَعْدَ الْفِطْرِ تَمَامُ السَّنَةِ».
“আল্লাহ একটি নেকীকে দশটি নেকীর সমান করেছেন। অতএব একমাস দশ মাসের সমান এবং ফিতরের পর ছয় দিন পূর্ণ বছর”।[4]
একই হাদীস ইবন খুযাইমাহ সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন এভাবে:
«صِيَامُ رَمَضَانَ بِعَشَرَةِ أَشْهُرٍ، وَصِيَامُ السِّتَّةِ أَيَّامٍ بِشَهْرَيْنِ، فَذَلِكَ صِيَامُ السَّنَةِ ».
“রমযানের সিয়াম দশ মাসের সমান এবং ছয় দিনের সিয়াম দুই মাসের সমান, এটাই পূর্ণ বছরের সিয়াম”।[5]
ফায়দা-২
শা‘বান ও শাউওয়াল মাসের নফল সিয়াম ফরয সালাতের পূর্বাপর সুন্নতের মতো। শাউওয়াল মাসের সিয়াম দ্বারা রমযানের ফরয সিয়ামের ত্রুটি-বিচ্যুতির প্রায়শ্চিত্ত ও প্রতিবিধান করা হয়। কারণ, এমন সিয়াম পালনকারী কম আছেন যাদের সিয়াম ত্রুটি-বিচ্যুতি ও পাপের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নি। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা নফল ইবাদত দ্বারা ফরয ইবাদতের ত্রুটি পূর্ণ করবেন। যেমন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن أول ما يحاسب الناس به يوم القيامة من أعمالهم الصلاة قال يقول ربنا جل وعز لملائكته وهو أعلم انظروا في صلاة عبدي أتمها أم نقصها فإن كانت تامة كتبت تامة وإن انتقص منها شيئا قال انظروا هل لعبدي من تطوع فإن كان له تطوع قال أتموا لعبدي فريضته من تطوعه ثم تؤخذ الأعمال على ذاكم» رواه أبو داود . والله أعلم
“কিয়ামতের দিন মানুষের আমল থেকে সর্বপ্রথম যার নিসাব নেওয়া হবে তা হচ্ছে সালাত। আমাদের রব ফিরিশতাদের বলবেন, যদিও তিনিই সবচেয়ে বেশি জানেন, আমার বান্দার সালাত দেখ পূর্ণ করেছে না অসম্পূর্ণ রেখেছে, যদি পূর্ণ করে পূর্ণ লিখা হবে, যদি কিছু ত্রুটি করে তিনি বললেন: দেখ আমার বান্দার কি নফল আছে? যদি তার নফল থাকে তিনি বলবেন: আমার বান্দার ফরযগুলো তার নফল থেকে পূর্ণ কর। অতঃপর এভাবে অন্যান্য আমলের হিসেব হবে”।[6]
ফায়দা-৩
রমযানের পর পুনরায় শাউওয়ালের সিয়াম রাখা রমযানের সিয়াম কবুল হওয়ার আলামত, কারণ আল্লাহ যখন বান্দার কোনো আমল কবুল করেন তাকে পরিবর্তীতে আরো নেক আমল করার তাওফীক দান করেন। যেমন, কোনো মনীষী বলেছেন: “নেক আমলের প্রতিদান হচ্ছে তার পরবর্তীতে নেক আমল করার তাওফীক লাভ করা”।
ফায়দা-৪
রমযানের সিয়ামের ফলে পেছনের সকল পাপ মোচন করা হয়। আর ঈদুল ফিতরের দিন সিয়াম পালনকারীদের প্রতিদান প্রদান করা হয়। অর্থাৎ ঈদ হচ্ছে পুরষ্কারের দিন। অতএব, পাপ মোচনের নি‘আমত শেষে শুকরিয়া হিসেবে শাউওয়ালের সিয়াম রাখাই সঙ্গত। কারণ, পাপ মোচনের ন্যায় বড় কোনো নি‘আমত নেই।
ফায়দা-৫
রমযান মাসে বান্দা যেসব আমল দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করেছে সেটা রমযান শেষ হওয়ার সাথে শেষ হয়ে যায় নি, বরং রমযানের পরও বাকি আছে যতদিন পর্যন্ত বান্দা জীবিত আছে। কারণ, কতক মানুষ রমযান শেষ হলে অনেক খুশি হয়, তাদের নিকট রমযানের সিয়াম কঠিন, ক্লান্তিকর ইবাদত ও দীর্ঘ সময় জুড়ে ছিল, এরূপ অবস্থায় তারা দ্রুত সিয়াম শুরু করে না। অতএব, ঈদুল ফিতরের পর পুনরায় সিয়াম শুরু করা প্রমাণ করে সিয়ামের প্রতি অনেক বান্দার আগ্রহ রয়েছে, সিয়াম দ্বারা তারা ক্লান্ত হয় নি এবং সিয়ামকে তারা অপছন্দ ও বোঝা মনে করে নি।[7]
শাউওয়াল মাসের সিয়াম সম্পর্কে ২০টি মাস‘আলা
১. শাউওয়ালের ছয় সিয়ামের ফযীলত কী?
ইবন উসাইমীন বলেন: “রমযানের সিয়ামের পর শাউওয়ালের ছয় সিয়াম পূর্ণ বছর সিয়ামের সমান”। ফতোয়া: (২০/১৭) (দলীলের জন্য উপরে বর্ণিত ইমাম মুসলিমের হাদীস দেখুন, অনুবাদক)।
২. শাউওয়ালের ছয়টি সিয়াম কি নারী-পুরুষ সবার জন্যই সমান?
ইবন উসাইমীন বলেন:
“নারী-পুরুষ সবার জন্যই সমান”। ফতোয়া: (২০/১৭)
৩. শাউওয়ালের ছয় সিয়াম রাখার পদ্ধতি কী?
ইবন বায বলেন: “মুমিন ব্যক্তি শাউওয়ালের পুরো মাস থেকে ছয়টি দিন বাছাই করে তাতে সিয়াম রাখবে। মাসের শুরুতে অথবা মাঝে অথবা শেষে যেভাবে ইচ্ছা সিয়াম রাখার অনুমতি আছে। চাইলে পৃথকভাবে রাখতে পারে”। মাজমুউল ফতোয়া: (১৫/৩৯০)
৪. শাউওয়ালের ছয় সিয়াম কীভাবে রাখা উত্তম?
ইবন বায বলেন: “সিয়াম দ্রুত ও মাসের শুরুতে লাগাতার রাখাই উত্তম”। মাজমুউল ফতোয়া: (১৫/৩৯০)
ইবন উসাইমীন বলেন: “উত্তম হচ্ছে ঈদের পরেই সিয়াম রাখা এবং সেগুলো যেন হয় লাগাতার”। মাজমুউল ফতোয়া: (২০/২০)
৫. শাউওয়ালের ছয় সিয়াম কি লাগাতার রাখা জরুরি?
ইবন বায বলেন: “লাগাতার ও পৃথক উভয়ভাবে রাখা বৈধ”। মাজমুউল ফতোয়া: (১৫/৩৯১)
৬. যদি কেউ নিয়মিত শাউওয়ালের ছয় সিয়াম রাখে, সেটা কি তার ওপর প্রতি বছর ওয়াজিব?
ইবন উসাইমীন বলেন: “যদি কতক বছর সিয়াম রাখে এবং কতক বছর না রাখে কোনো সমস্যা নেই, কারণ এটা নফল, ওয়াজিব সিয়াম নয়”। মাজমুউল ফতোয়া: (২১/২০)
৭. ছয় সিয়ামে কি রাত থেকে নিয়ত করা জরুরি?
ইবন উসাইমীন বলেন: “ছয়টি সিয়াম রাখার জন্য ফজরের পূর্ব থেকে নিয়ত করা জরুরি যেন পূর্ণ দিন পর্যন্ত সিয়াম প্রলম্বিত হয়”। মাজমুউল ফতোয়া: (১৯/১৮৪)
৮. কেউ বলে শাউওয়ালের ছয় সিয়াম বিদ‘আত?
ইবন বায বলেন: “এ কথাই বাতিল”। মাজমুউল ফতোয়া: (১৫/৩৮৯)
৯. শাউওয়ালের ছয় সিয়াম কাযা করা কি বৈধ, যদি কেউ কারণবশত ত্যাগ করে?
ইবন বায বলেন: “শাউওয়াল চলে যাওয়ার পর তার কাযা করা বৈধ নয়, কারণ এটা সুন্নত যার সময় শেষ, কারণবশত ত্যাগ করা হোক কিংবা কারণ ছাড়াই ত্যাগ করা হোক”। মাজমুউল ফতোয়া: (১৫/৩৮৯)
১০. শর‘ঈ কারণবশত শাউওয়ালের ছয় সিয়াম ত্যাগকারীর বিধান?
ইবন বায বলেন: “শাউওয়ালের যতটা সিয়াম তুমি রাখবে তার সাওয়াব তুমি পাবে, তবে শর‘ঈ কারণবশত যদি সিয়াম রাখা তোমার পক্ষে সম্ভব না হয় আশা করছি তুমি পূর্ণ সাওয়াব হাসিল করবে, আর শাউওয়ালের ছুটে যাওয়া সিয়ামের কাযা নেই”। মাজমুউল ফতোয়া: (১৫/৩৯৫)
১১. শাউওয়ালের ছয় সিয়ামের সাথে কাযা মিলিয়ে রাখার বিধান?
ইবন বায বলেন: “বিশুদ্ধ মতে এতে কোনো সমস্যা নেই”। মাজমুউল ফতোয়া: (১৫/৩৯৬)
১২. শাউওয়ালের ছয় সিয়াম জিলকদ মাসে কাযা করা বৈধ?
ইবন উসাইমীন বলেন:
১. যদি আমরা মনে করি, সফর অথবা অসুস্থতা অথবা নিফাসের কারণে কারো উপর পূর্ণ রমযানের কাযা ছিল, সে শাউওয়াল মাস সিয়াম রাখল এবং কাযাতেই তার পূর্ণ শাউওয়াল অতিবাহিত হল, তার পক্ষে জিলকদ মাসে ছয়টি সিয়াম রাখা বৈধ।
২. আর যদি সে অলসতা করে, এবং শাউওয়ালের কয়েকটি দিন চলে যায় যেখানে সে রমযানের কাযা করতে সক্ষম ছিল কিন্তু করে নি, অতঃপর শাউওয়ালের শেষ দিকে রমযানের কাযা করে এবং শাউওয়াল শেষে জিলকদ মাসে সিয়াম রাখে, এটা তার পক্ষে যথেষ্ট হবে না”। লিকাউল বাবিল মাফতুহ।
১৩. মান্নত নাকি শাউওয়াল কোন সিয়াম আগে রাখবো?
ইবন বায বলেন: “তোমার ওপর প্রথম জরুরি হচ্ছে মান্নতের সিয়াম পূর্ণ করা, অতঃপর শাউওয়ালের ছয় সিয়াম রাখা যদি তা সম্ভব হয়। কারণ, শাউওয়ালের ছয় সিয়াম মুস্তাহাব; পক্ষান্তরে মান্নতের সিয়াম ওয়াজিব”। ফতোয়া নুরুন আলাদ্দারব: (৩/১২৬১)
১৪. শাউওয়ালের ছয় সিয়ামের জন্য কি নিয়ত জরুরি?
ইবন উসাইমীন বলেন: “রমযান পরবর্তী শাউওয়ালের ছয় সিয়ামে যদি কেউ দিনে নিয়ত করে তাহলে সে পূর্ণ দিনের সাওয়াব পাবে না। যদি মনে করা হয় কেউ প্রথম দিন জোহরের সময় নিয়ত করে অতঃপর অবশিষ্ট পাঁচটি সিয়াম রাখে, তাহলে সে ছয়টি সিয়াম পূর্ণ পায় নি, পাঁচ দিন ও এক দিনের অর্ধেক, কারণ নিয়ত থেকেই সাওয়াব লিখা আরম্ভ হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إنما الأعمال بالنيات وإنما لكل امرئ ما نوى».
“আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাই যা সে নিয়ত করেছে”। এ ব্যক্তি দিনের শুরুতে সিয়াম রাখার নিয়ত করে নি অতএব তার পূর্ণ দিন সিয়াম হয় নি”। ফতোয়া নুরুন আলাদ্দারব।
১৫. শাউওয়ালের ছয় সিয়ামের হিকমত কী?
ইবন উসাইমীন বলেন: “শাউওয়ালের সিয়াম দ্বারা ফরয পূর্ণ করা উদ্দেশ্য, কারণ শাউওয়ালের ছয় সিয়াম ফরয সালাত পরবর্তী সুন্নতে রাতেবার মতো, যার দ্বারা ফরয সালাতে সৃষ্ট ত্রুটি পূর্ণ করা হয়”। ফতোয়া নুরুন আলাদ্দারব।
১৬. শাউওয়ালের তিনটি বা পাঁচটি সিয়াম পালনকারী কি সাওয়াব পাবে?
ইবন উসাইমীন বলেন: “হ্যাঁ, সংখ্যানুপাতে সাওয়াব পাবে, তবে পূর্ণ সাওয়াব পাবে না যার ওয়াদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নের বাণীতে করেছেন:
«من صام رمضان ثم أتبعه ستّاً من شوال فكأنما صام الدهر».
“যে রমযানের সিয়াম রাখল অতঃপর তার পশ্চাতে শাউওয়ালের ছয়টি রাখল, সে যেন পুরো বছর সিয়াম রাখল”। দেখুন: ফতোয়া নুরুন আলাদ্দারব।
১৭. শাউওয়ালের ছয় সিয়ামের সাথে সোম ও বৃহস্পতিবারের সিয়ামের নিয়ত করা কি বৈধ?
ইবন উসাইমীন বলেন: “যদি শাউওয়ালের ছয় সিয়াম সোম ও বৃহস্পতিবার হয়, তাহলে নিয়তের কারণে শাউওয়াল এবং সোম ও বৃহস্পতিবারের সাওয়াব পাবে”। ফতোয়া নুরুন আলাদ্দারব।
১৮. শাউওয়ালের ছয় সিয়াম কি রমযানের কাযা হিসেবে গণ্য করা বৈধ?
ইবন উসাইমীন বলেন: “শাউওয়ালের ছয় সিয়ামকে রমযানের কাযা হিসেবে গণ্য করা বৈধ নয়। কারণ, ছয় সিয়াম রমযানের অনুগামী, যেমন ফরয সালাতের অনুগামী তার পরবর্তী সুন্নত”। ফতোয়া নুরুন আলাদ্দারব।
১৯. কাফফারার সিয়ামের পূর্বে কি শাউওয়ালের ছয় সিয়াম রাখা বৈধ?
ইবন বায বলেন: “ওয়াজিব হচ্ছে কাফফারার সিয়াম দ্রুত আদায় করা, তার পূর্বে নফল রাখা বৈধ নয়, কারণ শাউওয়ালের ছয় সিয়াম নফল আর কাফ্ফারার সিয়াম ফরয। কাফ্ফারা দ্রুত আদায় করা ওয়াজিব”। মাজমুউল ফতোয়া: (১৫/৩৯৪)
২০. রমযানের কাযা যার ওপর রয়েছে, সে কি কাযা আদায় করার পূর্বে শাউওয়ালের ছয় সিয়াম রাখলে হাদীসে বর্ণিত সাওয়াব পাবে?
ইবন উসাইমীন বলেন: “রমযান মাসের সিয়াম পূর্ণ করা ব্যতীত শাউওয়ালের ছয় সিয়ামের ফযীলত হাসিল হবে না”। মাজমুউল ফতোয়া: (২০/১৮)
ইবন বায বলেন: “নিয়ম হচ্ছে কাযা দিয়ে সিয়াম শুরু করা, দ্রুত কাযা আদায় করাই ওয়াজিব, যদিও ছয়টি সিয়াম ছুটে যায়, কারণ ফরয নফলের চেয়ে মুকাদ্দিম বা অগ্রাধিকার প্রাপ্ত”। মাজমুউল ফতোয়া: (১৫/৩৯৩)
সমাপ্ত
………………………ooo………………………
[1] আহমদ, হাদীস নং ২৩০২১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৫; আবু দাউদ, হাদীস নং ২৪৩৩ ও তিরমিযী, হাদীস নং ৭৫৯। الدّهْر (আদ-দাহর) শব্দের অর্থ দুনিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সময় অর্থাৎ দুনিয়াবী জীবনের পুরোটাই দাহর। এ অর্থ প্রদান করেছে সূরা যাছিয়ার ২৪ নং আয়াতের দাহর শব্দ। কখনো দীর্ঘ সময়কে দাহর বলা হয়, যেমন সূরা দাহর/ইনসানের প্রথম আয়াতে দাহর শব্দ এ অর্থ প্রদান করেছে। আবার কখনো শুধু সময়কে দাহর বলা হয় কম হোক বা বেশি হোক। অত্র হাদিসে দাহর শব্দের অর্থ পূর্ণ এক বছর। পুরো রমযান ও শাউওয়ালের ছয় সিয়াম মিলে এক বছর সিয়ামের সমান হয়। কারণ, একটি নেকী দশটি নেকীর সমান হলে এক মাসের সিয়াম দশ মাসের সিয়ামের সমান। অতঃপর ছয়টি সিয়াম দু’মাসের সমান এভাবে বছর পূর্ণ হয়।
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৭৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৯।
[3] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৭১৫
[4] নাসাঈ, হাদীস নং ২৮৭৪। আরো দেখুন: সহীহ আত-তারগীব ও আত-তারহীব লিল আলবানি: (১/৪২১)
[5] সহীহ ইবন খুযাইমাহ, হাদীস নং ১৯৭৭ শাইখ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ বলেন: শাফে‘ঈ ও হাম্বলী ফিকহের একাধিক ফকীহ বলেছেন: “রমযানের পর শাউওয়ালের ছয় দিনের সিয়াম পূর্ণ বছর ফরয সিয়ামের সমপরিমাণ, অন্যথায় বহুগুণ বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি নফল সিয়ামেও রয়েছে। কারণ প্রত্যেক নেকীই দশ নেকীর সমান, এতে শাউওয়ালের বিশেষ ফযীলত কী যদি ফরয সিয়ামের সমান না হয়”?
[6] আবু দাউদ, হাদীস নং ৮৬৪। (পূর্বের কথার দলীল হিসেবে অনুবাদক হাদীসটি সংযোজন করেছেন)।
[7] সংকলক পাঁচটি ফায়দা লাতায়েফূল মাআরিফ: (২২০-২২২) লি ইবন রজব থেকে সংগ্রহ করেছেন।
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]
No comments:
Post a Comment