অমুসলিমদের প্রতি মুসলিমদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত?
Posted by SHẮFIQUL ISLAM • January20, 2014 •
প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
প্রকাশনায় : alquranerallo.blogspot.com
প্রশ্ন : একজন
অমুসলিম কোনো মুসলিম দেশে প্রবাসী যিম্মি (মুসলিম শাসনে বসবাসকারী
অমুসলিম) হিসেবে বসবাস করতে পারে। আবার একজন মুসলিম কোনো অমুসলিম দেশে
প্রবাসী হিসেবেও বসবাস করতে পারে। পরিস্থিতি দুটোর যা-ই হোক না কেন, একজন
অমুসলিমের প্রতি একজন মুসলিমের কী ধরণের আচরণ করা উচিত? অমুসলিমদের সম্ভাষণ
জানানো থেকে শুরু করে তাদের বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠান পালন করা সহ, তাদের
সাথে মসুলিমদের চালচলন কেমন হওয়া উচিত, সে ব্যাপারে আমি একটা সচ্ছ ধারণা
পেতে চাই। শুধু কর্মক্ষেত্রে কোনো অমুসলিমকে কি বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করার
অনুমতি আছে? দয়া করে জানাবেন।
উত্তর : প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ্র জন্য। অমুসলিমদের প্রতি মুসলিমদের কর্তব্যের মধ্যে অনেকগুলো বিষয় অন্তর্ভুক্ত।প্রথমত :
একজন অমুসলিমের প্রতি একজন মুসলিমের প্রথম কর্তব্য হলো, তাকে আল্লাহ্র দ্বীন, ইসলামের দা‘ওয়াত দিতে হবে। ইসলামের
দা‘ওয়াত দেওয়ার পাশাপাশি যতদূর সম্ভব, জ্ঞান নিজের বিশুদ্ধ অনুযায়ী
বাস্তবিক অর্থে ইসলাম কী, সে ব্যাপারে অমুসলিম ব্যক্তিকে বুঝাতে হবে। কারণ
অন্যান্য মুসলিমদের পাশাপাশি কোনো ইহুদী, খ্রিস্টান কিংবা মুশরিকের প্রতি
একজন মুসলিমের সর্বোচ্চ পরিমাণ অনুগ্রহ দেখানো উপায় হলো, তাদেরকে
আল্লাহ্র দ্বীনের দা‘ওয়াত দেওয়া। নবী (সা) বলেছেন :
“যে ব্যাক্তি অন্যদেরকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে, সে ‘আমলকারীর সমপরিমান সওয়াব পাবে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৯৩]
‘আলীকে (রা) খায়বারে প্রেরণের সময় রাসূল
(সা) নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তিনি যেন ইহুদীদেরকে ইসলামের দা‘ওয়াত দেন।
রাসূল (সা) বলেছিলেন :
“আল্লাহ্র
কসম! আল্লাহ্ যদি তোমার মাধ্যমে একজন মাত্র ব্যক্তিকে হিদায়াত দান করেন,
তাহলে তোমার জন্য তা হবে লাল উট (সেরা প্রজাতির উট) থাকার চেয়েও অধিক
উত্তম।”
তিনি (সা) আরও বলেছিলেন :
“যে
ব্যক্তি অন্যদেরকে সঠিক পথের দিকে আহ্বান করে, সে তাদের সমপরিমান সওয়াব
লাভ করবে, যারা সে পথের অনুসরণ করবে। অথচ তাদের কারও সওয়াব থেকে
বিন্দুমাত্র কম করা হবে না।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮৩২]
কাজেই, আন্তরিকতার সাথে একজন অমুসলিমকে
ইসলামের দা‘ওয়াত দেওয়া এবং তার কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছে দেওয়া আল্লাহ্র
নৈকট্য লাভের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়।
দ্বিতীয়ত :
কোনো মুসলিম শারীরিক, আর্থিক কিংবা
সম্মান-মর্যাদার দিক থেকে অমুসলিম ব্যাক্তির প্রতি কোনোরূপ অন্যায় করতে
পারবে না। অমুসলিম ব্যক্তি যদি যিম্মি (মুসলিম শাসনাধীনে বসবাসকারী),
মুস্তা’মান (মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় নিরাপত্তাপ্রাপ্ত) কিংবা মু‘আহিদ (যার
দেশের সাথে মুসলিমদের শান্তিচুক্তিতে আবন্ধ) হয়, তাহলে তাকে তার প্রাপ্য
অধিকার দিতে হবে এবং চুরি, বিশ্বাসঘাতকতা বা প্রতারণার মাধ্যমে তার
ধনসম্পদের ক্ষয়ক্ষতি করা যাবে না। তাকে হত্যা করা যাবে না এবং আঘাত করে
শারীরিকভাবে কষ্ট দেওয়া যাবে না। কারণ সে মু‘আহিদ, যিম্মি কিংবা
মুস্তা’মান হওয়ায় ইসলামী শারী‘আহ্ কর্তৃক তার নিরাপত্তা সুরক্ষিত।
তৃতীয়ত :
এমন কোনো কারণ নেই যার ফলে আমরা অমুসলিম
সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য, তাদের কাছে জিনিসপত্র ভাড়া দেওয়া বা তাদের কাছ থেকে
ভাড়া নেওয়া ইত্যাদি কাজগুলো করতে পারবো না। সহীহ হাদীসের বর্ণনা
অনুযায়ী, আল্লাহ্র রাসূল (সা) কাফের এবং মুশরিকদের থেকে জিনিসপত্র
কিনেছেন। আর তাদের থেকে জিনিসপত্র কেনা মূলত তাদের সাথে সম্পর্ক রাখা। তাঁর
(সা) মৃত্যুর সময়েও তাঁর একটি বর্ম একজন ইহুদীর কাছে বন্ধক ছিল। ইহুদীর
কাছে একসময় বর্মটি বন্ধক রেখে রাসূল (সা) তাঁর পরিবারের জন্য খাবার
কিনেছিলেন।
চতুর্থত :
অমুসলিমদেরকে প্রথমে সম্ভাষণ জানানো মুসলিম ব্যক্তির উচিত নয়। নবী (সা) বলেছেন,
“ইহুদী কিংবা খ্রিস্টানদের প্রথমে তোমরা সালাম জানাবে না।” [সহীহ মুসলিম, সালাম অধ্যায়, হাদীস নং ২১৬৭]
তিনি (সা) আরও বলেছেন,
“যদি আহলে কিতাবদের কেউ সালামের (আস্সালামু ‘আলাইকুম) মাধ্যমে তোমাদের অভিবাদন জানায়, তাহলে বোলো, ‘ওয়া ‘আলাইকুম।’” [আল-বুখারি, হাদীস নং ৫৯০১; মুসলিম, হাদীস নং ২১৬৫]
অতএব, নিজে থেকে প্রথমেই কোনো কাফিরকে
সালাম জানানো মুসলিমের উচিত নয়। তবে কোন কাফের, ইহুদী বা খ্রিস্টান যদি
কোনো মুসলিমকে সালাম জানায়, তাহলে রাসূলের (সা) নির্দেশ অনুযায়ী, “ওয়া
‘আলাইকুম” বলে উত্তর দিতে হবে।
ভালো প্রতিবেশী হওয়া মুসলিমদের উপর অমুসলিমদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার।
কাজেই কোনো অমুসলিম আপনার প্রতিবেশী হলে তার প্রতি সদয় হউন। তাকে
কোনোভাবে হয়রানি করবেন না। অসচ্ছল হলে তাকে সাহায্য করুন। উপহার দিয়ে,
সুপরামর্শ দিয়ে তাকে সহায়তা করুন। এতে করে সে ইসলামের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট
হবে এবং মুসলমান হওয়ার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠবে। অধিকিন্তু, প্রতিবেশী
হিসেবে আপনার উপর তার অধিকার রয়েছে। রাসূল (সা) বলেছেন,
“জিব্রীল
(আ) প্রতিবেশীর প্রতি সদয় হওয়ার জন্য আমাকে এতটাই তাগিদ দিতে থাকলেন যে,
আমি ভাবলাম, তিনি হয়তো প্রতিবেশীকে আমার উত্তরাধিকারী বানিয়ে ফেলবেন।” [আল-বুখারি ও মুসলিম]
প্রতিবেশী কাফির হলেও প্রতিবেশী হিসেবে
তার অধিকার রয়েছে। প্রতিবেশী যদি কাফির হওয়ার পাশাপাশি আত্মীয়ও হয়,
তাহলে তার অধিকার দ্বিগুন: প্রতিবেশী হিসেবে এবং আত্মীয় হিসেবে।
প্রতিবেশী দরিদ্র হলে তাকে যাকাত না দিয়ে
আর্থিকভাবে সাহায্য করুন। কারণ প্রতিবেশী হিসেবে এই সাহায্য পাওয়ার
অধিকার তার আছে। এই সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন (অর্থের ব্যাখ্যা),
“দ্বীনের
ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে স্বদেশ হতে
বহিষ্কার করেনি, তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার ও ন্যায় বিচার করতে আল্লাহ্
তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। আল্লাহ্ তো ন্যায়-পরায়ণদেরকে ভালোবাসেন।” [সূরা মুমতাহিনাহ্, আয়াত-৮]
আস্মা বিন্তে আবি বাক্র (রা) থেকে
বর্ণিত একটি বিশুদ্ধ বর্ণনানুযায়ী, মক্কার মুশরিক এবং রাসূলের (সা) মধ্যে
যুদ্ধবিরতি চলাকালীন তার মা — যে তখনও মুশরিকা ছিল — তার সাথে দেখা করে
সাহায্য চাইলো। মায়ের সাথে তার সম্পর্কের বন্ধনকে বহাল রাখবে কি না, সে
বিষয়ে আস্মা রাসূলের (সা) কাছে অনুমতি চাইলেন। উত্তরে রাসূল (সা)
বলেছিলেন,
“তার সাথে রক্তের বন্ধনকে বহাল রাখো।”
অমুসলিমদের উৎসব-অনুষ্ঠান উদ্যাপনের
ক্ষেত্রে বিধান হলো, কোনো মুসলিম সেগুলোতে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তবে
তাদের কোনো প্রিয়জন মারা গেলে, সমবেদনা জ্ঞাপন করাতে দোষের কিছু নেই।
যেমন: ‘আল্লাহ্ আপনার ক্ষতিপূরণ করুন’ বা এই জাতীয় সহানুভূতিপূর্ণ কথা
বলা যেতে পারে। তবে মৃত ব্যক্তি কাফির হলে “আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করে দিন”
বা ‘আল্লাহ্ তার উপর দয়া করুন’ ইত্যাদি বলা যাবে না এবং মৃতের জন্য কোনো
দো‘আও করা যাবে না। কিন্তু মৃত ব্যক্তির জীবিত আত্মীয়স্বজনদের ক্ষতিপূরণের জন্য এবং তাদের হিদায়াতের জন্য দো‘আ করা যাবে।
ফাতাওয়া নূর ‘আলা আদ্-দার্ব, ১/২৮৯-২৯১
No comments:
Post a Comment