কুরান ও সাহীহ হাদীসের আলোকে সাহীহ সালাত



 কুরান ও সাহীহ হাদীসের আলোকে সাহীহ সালাত 
২০/০১/২০১৪ পোস্ট করেছেন: শফিকুল ইসলাম
                       {বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম}

 ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে সালাত হল দ্বিতীয়[সাহীহ বুখারী,১ম খন্ড, বিশ্বাস অধ্যায়,হাদীস-৭]  সালাত কীভাবে আদায় করতে হবে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি মুহাম্মাদ(সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসল্লাম) আমাদের হাতে-কলমে শিখিয়ে দিয়েছেন আমাদের প্রিয় নবি(স) যেভাবে সালাত আদায় করছেন আমাদেরকে ও সেই একই ভাবে সালাত আদায় করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন- সাল্লু কামা রাআই তুমুনী উসাল্লী’ ,আর্থা তোমরা যেভাবে আমাকে সালাত সম্পাদন করতে দেখ সেভাবেই সালাত আদায় কর।-[বুখারী,১ম খন্ড,আযান অধ্যায়,হাদীস-৬০৪; বুখারী, ৯ম খন্ড,হাদীস-৩৫২] সুতরাং এ হাদীস হতে স্পষ্ট বুঝা যায় যে-এই নির্দেশটা নারীদের জন্য,এই নির্দেশটা পুরুষদের জন্যঅতএব নারী ও পুরুষের সালাতে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই,যদিও আমরা আমাদের চারপাশে নারী ও পুরুষের সালাতের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ করিকিন্তু বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেইঅনেকেই এ প্রশ্ন করতে পারেন তাহলে কি বড় বড় আলেম,পীর তাঁরা কি ভুল করছেন? এখন কথা হচ্ছে যদি কেউ কুরান ও হাদীসের কথা মত না চলে তাহলে তো সে ভুল করছে বিনা দ্বিধায় বলা যায়তাদের বেশিরভাগই মাযহাবের কথা বলেন কেউবলেন মাযহাব মানা ফরয, কেউ বলেন ওয়াযিবকথা হল আল্লাহ ও তাঁর রাসূল(স) ব্যাতীত কেউ কোনো কিছুকেই ফরয,ওয়াযিব বা সুন্নাত বানাতে পারবেন না তারা কুরানের কোন আয়াতে বা কোন হাদীসেই বা পেল যে মাযহাব মানা ফরয বা ওয়াযিব আবার অনেকেই বলেন যে আমাদের নবি(স) বিভিন্ন ভাবে সালাত আদায় করছেন, যদিও তাদের এ কথার স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ বা দলীল নেইআমদের নবি(স) সারাজীবন একভাবেই সালাত আদায় করেছেন, যার স্বপক্ষে জোরালো প্রমাণ রয়েছেদ্বীনের একমাত্র অনুসরণীয় ব্যাক্তি হলেন রাসূল(স)কারণ আল্লাহ পবিত্র কুরানের বিভিন্ন স্থানে বলেন- তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও রাসুলের আনুগত্য কর।[সূরা মুহাম্মাদ-৩৩;সুরা আলে ইমরান-৩২,১৩২;সুরা নিসা-৫৯;সুরা তাঘাবুন-১২;সুর মুজাদিলা-১৩,সুরা নুর-৫৪,৫৬;সুরা মুহাম্মাদ-৩৩] তাই সর্ব ক্ষেত্রে আমরা রাসুল(স) কে অনুসরণ করব এবার মূল আলোচনায় আসা যাক অর্থা সাহীহ হাদীসের আলোকে সালাত আদায় করার নিয়ম- আমরা ওযুর দোয়া বা নিয়্যাত হিসেবে বিসমিল্লাহিল আলীইল আযীম…’-ইত্যাদি পড়ে থাকি যা স্পষ্ট বিদাতশুধুমাত্র বিসমিল্লাহবলে ওযু শুর করতে হয় আর  নিয়্যাত করতে হয় মনে মনে। [সুনানু আবু দাউদ,১ম অধ্যায়(পবিত্রতা),হাদীস-১০১; ইবনে মাজাহ; জামিই তিরমিযি,সালাত অধ্যায়, হাদীস-২৬] ওযুর সময় দেখা যায় অনেকে মাথা তিন ভাগের এক ভাগ বা চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ করেন যা সাহীহ হাদীস বিরোধীরাসুল(স) ওযুতে সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করেছেনপানিতে ভিজানো উভয় হাত মাথার অগ্রভাগ(সামনের চুলের গোড়া) হতে আরম্ভ করে ঘাড় পর্যন্ত মুছে নিয়ে পুনরায় ঘাড় হতে মাথার অগ্রভাগ পর্যন্ত মুছতে হবে।[সাহীহ বুখারী, ১ম খন্ড, ওযু অধ্যায়, হাদীস-১৯৬,১৯৮; সাহীহ মুসলিম, পবিত্রতা অধ্যায়, হাদীস-৪৫৫; মালিক(মুয়াত্তা), পবিত্রতা অধ্যায়, হাদীস-৩২; সুনানু আবু দাউদ, পবিত্রতা অধ্যায়, হাদীস-১২৪; জামিই তিরমিজি, সালাত অধ্যায়, হাদীস-৩২] {লক্ষনীয়ঃ মুসলিম ও তিরমিযি তে ওযু শেষ করে যে দোয়া পড়তে হয় তা আছে} আযান শুনলে মুয়াযযিন যা বলেন তা মুখে মুখে আন্তরিকতার সাথে বলতে হবে।[সাহীহ বুখারী, ১ম খন্ড, আযান অধ্যায়, হাদীস-৫৮৫; সাহীহ মুসলিম, সালাত অধ্যায়, হাদীস-৭৪৬; মালিক(মুয়াত্তা), সালাত অধ্যায়,হাদীস-১৫০;জামিই তিরমিযি,সালাত অধ্যায়,হাদীস-২০৮] মুয়াযযিন যখন হাইয়া আলাস সালাহবলে তখন বলতে হবে লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ’[সাহীহ বুখারী, ১ম খন্ড, হাদীস-৫৮৭] তবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশএর অনূদিত সুনানু নাসাঈ-{১ম খন্ড,পৃষ্ঠা-৩১০,হাদীস-৬৭৮} অনুযায়ী মুয়াযযিন যখন হাঈয়া  আলাস সালাহহাঈয়া আলাল ফালাহবলে তখন লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ’-বলতে হবেআযানের শেষে নবিজি(স) এর দূরুদ পড়ে তারপর আযানের দোয়া পড়তে হয়।[নাসাঈ(ইসলামিক ফাউন্ডেশ্ন বাংলাদেশ-ইফাবা),১ম খন্ড,পৃষ্ঠা-৩১০-৩১১,হাদীস-৬৭৯-৬৮১] {লক্ষনীয়ঃ আযানের দোয়া পড়ার সময় হাত তোলা, মুখে হাত বুলান,আযানের আগে রাসূল(স) এর প্রতি সালাম পেশ করা, রাসূল(স) এর নাম শুনে মুখে চুমো খেয়ে চোখে বুলানো ইত্যাদি প্রমাণহীন ও মনগড়া কাজ তাই এগুলো অবশ্যই পরিত্যাজ্য} আযান ও ইকামতের বাক্য যথাক্রমে ১৫ ও ১১ বাক্যের অর্থা আযানের বাক্য জোড়ায় জোড়ায় এবং ইকামতের বাক্য একবার করে বলতে হবে, শুধুমাত্র কাদ কামাতিস সালাহদুই বার বলতে হবে যার প্রমাণ খুবই জোরালো।[সাহীহ বুখারী,১ম খন্ড,আযান অধ্যায়, হাদীস-৫৭৯; সাহীহ মুসলিম, সালাত অধ্যায়, হাদীস-৭৩৬,৭৩৭,৭৩৯; সুনানু নাসাঈ(ইফাবা), ১ম খন্ড, আযান অধ্যায়, হাদীস-৬২৮-৬২৯;জামিই তিরমিযি,সালাত অধ্যায়,হাদীস-১৯৩] তবে আন্যান্য গুলোও জায়েয আছে মসল্লা পাকের দোয়ার কোনো প্রমাণ নেইঅর্থা, তাকবিরে তাহরিমা বা আল্লাহু আকবার বলে হাত বাধার আগে কোনো দোয়া নেই, হাত বাঁধার পর আল্লহুম্মা বাএদ বাইনী’, ‘ইন্নীওয়াজ্জাহতুইত্যাদি সানা হিসেবে পড়তে হয়।[ সাহীহ মুসলিম, সালাত অধ্যায়, হাদীস-৭৫৯,৭৬০,৭৬৫,৭৬৬,৭৬৭;আবু দাউদ, ৩য় বই, হাদীস-৭৬৫,৭৭৪; মালিক(মুয়াত্তা), সালাত অধ্যায়, হাদীস-১৭১] হাদীসে আনেক প্রকারের সানার উল্লেখ আছেতবে সবচেয়ে উত্তম সানাটি হল-আল্লহুম্মা বাএদ বাইনী ওয়া বায়না খাত্বা-য়া-য়া, কামা বাআদতা বায়নাল মাশরিকি ওয়াল মাগরিব,আল্লাহুম্মা নাক্কীম-মিন খাত্ব-য়া-য়া কামা ইউনাক্কাছ  ছাওবুল আবইয়াযু মিনাদ দানাস,আল্লহুম্মা-ইগসিল মিন খাত্ব-য়া-য়া বিচ্ছালজি ওয়াল মায়ী  ওয়াল বারাদ”{ ।[সাহীহ মুসলিম,সালাত অধ্যায়,হাদীস-১২৪৫; সুনানু নাসাঈ(ইফাবা),পৃষ্ঠা-৪০,হাদীস-৮৯৮]।।আল্লহুম্মা বাএদ বাইনী ওয়া বায়না খাত্বা-য়া-য়া, কামা বাআদতা বায়নাল মাশরিকি ওয়াল মাগরিব,আল্লাহুম্মা নাক্কীম-মিন খাত্ব-য়া-য়া কামা ইউনাক্কাছ  ছাওবুল আবইয়াযু মিনাদ দানাস,আল্লহুম্মা-ইগসিল খাত্বা-য়া-য়া বিল মায়ী ওয়াচ্ছালজি ওয়াল বারাদ”{অর্থঃঐ}[সাহীহ বুখারী,১ম খন্ড, সালাতের বৈশিষ্ট অধ্যায়,হাদীস-৭১১]   এছাড়া অন্যান্য সানাও পড়া যায়।   আমরা নিয়্যাত হিসেবে নাওাইতুয়ান উছাল্লিয়ালিল্লাহী তালা…’ পড়ি তা সাহীহ বা যঈফ কোনো সূত্রে প্রমাণ নেইনিয়্যাত মানে মনের সংকল্প। [সাহীহ বুখারী,১ম খন্ড, হাদীস-১] আপনার মনে রয়েছে যে আপনি এই ওয়াক্তের এই নামায পড়বেন এটাই হল নিয়্যাতনিয়্যাত মুখে বলার প্রমাণ নেই দেখা যায় সালাতে অনেকেই নাভিতে বা নাভির নিচে অর্থা কোমরে হাত বাঁধেন যা সম্পূর্ণ সাহীহ হাদীস বিরোধীহাত বুকে বা বুকের কাছে বাঁধতে হবে।[সাহীহ মুসলিম, সালাত অধ্যায়,হাদীস-১১১৩; নাসাঈ(ইফাবা),১ম খন্ড,পৃষ্ঠা-৩৮-৩৯,হাদীস-৮৯৩-৮৯৪;সুনানু আবু দাউদ,সালাত অধ্যায়(৩য় বই), হাদীস-৭৫৮] সূরা ফাতিহা ইমামের পেছনেও চুপে চুপে পড়তে হয়সূরা ফাতিহা ব্যাতিত কোনো সালাত-ই হয় না।[সাহীহ বুখারী,১ম খন্ড,সালাতের বৈশিষ্ট অধ্যায়, হাদীস-৭২৩; সাহীহ মুসলিম, সালাত অধ্যায়, হাদীস-৭৭১-৭৮০; মালিক(মুয়াত্তা), সালাত অধ্যায়,হাদীস-৪১; সুনানু নাসাঈ, ২য় খন্ড, হাদীস-৯১৩-৯১৪,৯২৩; জামিই তিরমিযি,সালাত অধ্যায়, হাদীস-২৪৭] জামআতের সালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ শেষে আর্থা ইমাম যখন গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দ-ল্লীনবলা শেষ করেন তখন সশব্দে আমিনবলার জোরালো তাগিদ রয়েছেযার আমিনফেরেশ্তাদের আমিন’-এর সাথে মিলে যাবে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। [সাহীহ বুখারী, সালাতের বৈশিষ্ট অধ্যায়,হাদীস-৭৪৭-৭৪৯; সাহীহ মুসলিম সালাত অধ্যায়,হাদীস-৮১১-৮১৬; মালিক(মুয়াত্তা),সালাত অধ্যায়,হাদীস-৪৭-৪৯; জামিই তিরমিযি,সালাত অধ্যায়, হাদীস-২৪৮-২৫০] ১০তাকবিরে তাহরিমা, রুকুতে যাওয়ার সময়, রুকু হতে উঠার সময়, দুই রাকাতের বেশি সালাত থাকলে ২য় রাকাত হতে উঠার সময় দুই হাত উঠানোর বিশেষ তাগিদ রয়েছে, যাকে বলা হয় রাফউল ইয়াদায়েন।[সাহীহ বুখারী, ১ম খন্ড,সালাতের বৈশিষ্ট অধ্যায়,হাদীস-৭০২-৭০৬;সাহীহ মুসলিম, সালাত অধ্যায়,হাদীস-৭৫৮-৭৬৩;সুনানু আবু দাউদ,সালাত অধ্যায়(৩য় বই),হাদীস-৭২৫,৭৩৭,৭৪৩;]রাসূল(স)সিজদায় দুই হাত উত্তোলন করতেন নাআনেকেই বলে থাকেন যে রাফউল ইয়াদায়েনমানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে কিন্তু এর পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই  ১১সালাতের দুই সাজদার মাঝে স্থির হয়ে বসা ফরয-এটা অধিকাংশ ওলামাদের মতেতবে ইমাম আবূ হানীফা(রহ) এর মতে তা ওয়াজিবআর এ সময় দোয়া পড়তে হয় দোয়াঃ আল্লাহুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়াহদিনী ওয়া আফিনী ওয়ারযুকনি”{অর্থঃ-হে আল্লাহ, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন,আমার উপর রহম করুন,আমাকে সপথ প্রদর্শন করুন,আমাকে সুস্থতা দান করুন ও আমাকে রুযী দান করুন’}[সুনানু আবূ দাউদ, সালাত অধ্যায়(৩য় বই), হাদীস-৮৪৯; জামিই তিরমিযি, সালাত অধ্যায়, হাদীস-২৮৪] এছাড়া অন্য আরেক প্রকার দোয়া আছে-রাব্বিগ ফিরলী, রাব্বিগ ফিরলী”[সুনানু নাসাঈ(ইফাবা),২য় খন্ড,পৃষ্ঠা-১৫৩,হাদীস-১১৪৮]      ১২তাড়াতাড়ি নামায পড়লে নামায হয় নারুকু,সিজদাহ অর্থা সালাত ধীর-স্থির ভাবে আদায় করতে হয়।[সাহীহ বুখারী,১ম খন্ড,সালাতের বৈশিষ্ট অধ্যায়,হাদীস-৭২৪,৭৫৯;সাহীহ মুসলিম,সালাত অধ্যায়,হাদীস-৭৮১]   ১৩জামআতের সালাতে দেখা যায় বেশিরভাগ ইমাম জামআত শেষে দুই হাত তুলে মুনাজাত করেন আর যেসব মুক্তাদীর সালাত শেষ তারাও দুই হাত তুলে আমিন-আমিন করেন, যা স্পষ্ট বিদাতপ্রথমত এটা বিদাত, উপরন্তু যেসব মুক্তাদীর সালাত শেষ হয়নি তাদের সালাতে অসুবিধা হয়নবি(স) কোনো ফরয সালাতের পরে এভাবে মুনাজাত করননিবরং তিনি সালাত শেষে মুক্তাদিদের দিকে ফিরে বসতেন।[সাহীহ বুখারী,১ম খন্ড, সালাতের বৈশিষ্ট অধ্যায়, হাদীস-৮০৬-৮০৮; সাহীহ মুসলিম,সালাত অধ্যায়,হাদীস-৭৬৭; সুনানু নাসাঈ(ইফাবা),২য় খন্ড,পৃষ্ঠা-২৪৪,হাদীস-১৩৩৭, পৃষ্ঠা-২৫৮-২৫৯,হাদীস-১৩৬২-১৩৬৪; আবু দাউদ, সালাত অধ্যায়(২য় বই),হাদীস-৬১৪] এ সময় বিভিন্ন দোয়া পড়তে হয়, যা বুখারী সহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে আছে।   ১৪আমাদের দেশে নারী-পুরুষের সালাতে অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়, তবে বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেইআমাদের প্রিয় নবি(স) বলেছেন- সাল্লু কামা রাআই তুমুনী উসাল্লী’ ,আর্থা তোমরা যেভাবে আমাকে সালাত সম্পাদন করতে দেখ, সেভাবেই সালাত আদায় কর।-[বুখারী,১ম খন্ড,আযান অধ্যায়,হাদীস-৬০৪; বুখারী, ৯ম খন্ড,হাদীস-৩৫২] সুতরাং এ হাদীস হতে স্পষ্ট বুঝা যায় যে-এই নির্দেশটা নারীদের জন্য,এই নির্দেশটা পুরুষদের জন্যঅতএব নারী ও পুরুষের সালাতে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেইতবে নারীদের ক্ষেত্রে বেশ কিছু জিনিস আছে যেমন- নারীদের পর্দা করতে হয়, নারীদের জন্য শেষের কাতার সবচেয়ে উত্তম[সাহীহ মুসলিম,সালাত অদ্যায়,হাদীস-৮৮১] প্রভৃতি যা মৌ্লিক বিষয়ের মধ্যে পড়ে না ১৫দেখা যায় অনেকেই তাশাহুদ পাঠের সময় আশহাদু আন লা ইলাহাবলার সময় শাহাদাত আংগুল টপ করে তুলে নামিয়ে ফেলেন, যার ভিত্তি নেইসাহীহ সুন্নাহ হচ্ছে-তাশাহুদ পড়ার শুরু থেকে বৈঠকের শেষ পর্যন্ত ডান হাতের কনিষ্ঠা ও অনামিকা আংগুল মুড়ে বৃদ্ধা ও মধ্যমা আংগুলের মাথাদুটি মিলিয়ে শাহাদাত আংগুল্কে সালাম ফিরানোর আগ পর্যন্ত ইশারার হালতে একটু একটু নাড়তে হবে।[সাহীহ মুসলিম,সালাত অদ্যায়, হাদীস-১২০২; সুনানু আবু দাউদ,সালাত ইঅধ্যায়(৩য় বই), হাদীস-৭২৫] ১৬আমরা লক্ষ্য করলে দেখব যে, মুক্তাদীরা একজনের কাধের সাথে আরেকজনের কাধ, একজনের পায়ের সাথে আরেকজনের পা মিলিয়ে না দাঁড়িয়ে বরং ফাঁক হয়ে দাঁড়ানআর তা সম্পূর্ণ রূপে সুন্নাতের খেলাপ সালাতে একজনের কাধের সাথে আরেকজনের কাধ, একজনের পায়ের সাথে আরেকজনের পা মিলিয়ে দাঁড়াতে হয়, নাহলে ফাঁকা জায়গায় শয়তান ছাগলের বাচ্চার মতো ঢুকে যায়।[সাহীহ মুসলিম,সালাত অধ্যায়,হাদীস-৮৬৪,৮৬৫; সুনানু আবু দাউদ,সালাত অধ্যায়(২য় বই),হাদীস-৬৬৬,৬৬৭,৬৮১] ১৭ভিতিরের সালাতে দোয়া কূনুতের আগে দুই হাত তোলা হয়, যা নবি(স) এর কোনো আমলে নেইএ বিষয়ে কোনো সহীহ হাদীস নেইভিতির মানে বিজোড়ভিতিরের সালাত এক , তিনপাঁচ, সাত যেকোনো বিজোড় রাকাতে পড়া যায়তবে নবি(স) তিন রাকাত-ই বেশি পড়েছেনভিতিরের সালাত দুই রাকাত করে পড়ে পড়ে শেষে এক রাকাত পড়ে বিজোড়(ভিতির)করা অথবা একসাথে বিজোড় রাকাত পড়লে জোড় রাকাতের মাঝে কোনো বৈঠক নেই, শুধু শেষ বিজোড় রাকাতে বৈঠক আছেঅর্থা ভিতিরের সালাতের দুইটি নিয়ম আছে- (ক)দুই রাকাত করে পড়ে পড়ে শেষে এক রাকাত পড়ে তাশাহুদ,দূরুদ(ইত্যাদি) পড়ে সালাম ফিরিয়ে বিজোড় করা [সাহীহ বুখারী,২য় খন্ড,ভিতির অধ্যায়,হাদীস-১০৫,১০৬,১০৭১০৯;সাহীহ মুসলিম, সালাত অধ্যা্য, হাদীস-১৬০৮,১৬০৯,১৬১১,১৬৩২,১৬৩৩,১৬৩৪,১৬৩৫] (খ)দুই রাকাত পর পর না বসে কেবল শেষ বিজোড় রাকাতে বসে তাশহুদ,দুরুদ পড়ে সালাম ফিরিনো।[ সাহীহ বুখারী,২য় খন্ড, ভিতির অদ্যায়,হাদীস-১০৭;সাহীহ মুসলিম,সালাত অধ্যায়,হাদীস-১৬০৪,১৬০৫,সুনানু আবু দাউদ,সালাত অধ্যায়(৮ম বই),হাদিস-১৪১৭] ১৮সালাতে ভুল হলে আমরা ইমাম সাহেবকে তাকবির দিয়ে সতর্ক করি,যার কোনো দলীল নেইসালাতে ভুল হলে পুরুষ মুক্তাদী সুবহান আল্লাহবলে এবং মহিলা মুক্তাদী হাত দিয়ে শব্দ করে ইমাম সাহেবকে সতর্ক করবেন।[সাহীহ বুখারী,২য় খন্ড,সালাতের মধ্যে প্রতিক্রিয়া অধ্যায়(২য় বই),হাদীস-২৯৫,২৯৬,৩০৯;সাহীহ মুসলিম,সালাত অধ্যায়,হাদীস-৮৫০-৮৫২] ১৯সালাতে ভুল হলে আমরা সালাম ফিরিয়ে সিজদাহ করে তাশাহুদ পড়ে তারপর আবার সালাম ফিরাই, যা সুন্নাতের খেলাপসাহীহ সুন্নাত হল -   (ক) সালাত পড়া অবস্থায় ভুল ধরা পড়লে সালাম ফিরানোর পূর্বে দুটি সাহূ সিজদাহ করতে হয়।[সাহীহ বুখারী,২য় খন্ড, সালাতের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া অধ্যায়(২য় বই),হাদীস-৩১৫,৩১৬,৩২২;সাহীহ মুসলিম,সালাত অধ্যায়,হাদীস-১১৬৩-১১৭৪;আবু দাউদ,সালাত অধ্যায়(৩য় বই),হাদীস-১০২২,১০২৯] (খ) সালাম ফিরানোর পর যদি সালাত কম পড়ার ভুল ধরা পড়ে তাহলে বাকি সালাত পূর্ণ করে  সালাম ফিরানোর পূর্বে বা পরে দুটি সাহু সিজদাহ করতে হবে।[সাহীহ বুখারী,২য় খন্ড, সালাতের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া অধ্যায়(২য় বই),হাদীস-৩১৮,৩১৯,৩২১;সাহীহ মুসলিম,সালাত অধ্যায়,হাদীস-১১৮৪,১১৮৫,১১৮৭,১১৮৮,;আবু দাউদ,সালাত অধ্যায়(৩য় বই),হাদীস-১০১০,১০১৫] (গ)যদি সালাম ফিরানোর পর মনে সন্দেহ জাগে যে সালাতে বেশি রাকাত পড়া হয়েছে অথবা যদি তিন নাকি চার রাকাত পড়া হয়েছে সে সন্দেহ থাকে তাহলে শুধু দুটি সাহু সিজদাহ করলেই হবে।[সাহীহ বুখারী,২য় খন্ড, সালাতের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া অধ্যায়(২য় বই),হাদীস-৩১৭,৩২৩,৩২৪;সাহীহ মুসলিম,সালাত অধ্যায়, হাদীস-১১৭৫,১১৭৭,১১৭৮,১১৭৯,১১৮০,১১৮১] ২০জুমুয়ার সালাতে ফরয সালাতে পূর্বে দুই রাকাত ব্যাতিত আর কোনো সালাত নেইএই দুই রাকাত খুতবা শুরু হলেও পড়ার নির্দেশ আছেআবার জুমুয়ার ফরয সালাতের পর দুই বা চার রাকাত সালাত পড়তে হয়।[সাহীহ বুখারী,২য় খন্ড,জুমুয়ার সালাত অধ্যায়,হাদীস-৫২,৫৩,৫৯; সাহীহ মুসলিম,সালাত অধ্যায়,হাদীস-১৮৯৭,১৮৯৮,১৮৯৯,১৯০০,১৯০১,১৯০২,১৯০৩,১৯১৫,১৯১৬,১৯১৭,১৯১৮,১৯১৯,১৯২০] ২১মসজিদে ঢুকে বসার আগে দুই রাকাত সালাত আদায়ের তাগিদ রয়েছে।[সাহীহ বুখারী,১ম খন্ড,হাদীস-৪৩৫;সাহীহ মুসলিম,সালাত অধ্যায়,হাদীস-১৫৪০-১৫৪৫] [বিশেষ কথাঃ সালাত সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদের মুসলমানদের মধ্যে বর্তমানে চরম অনৈক্য বিরাজমানআর এ মতানৈক্যের প্রধান কারণ হল মাযহাব সহ যাবতীয় দলাদলি, কুরানে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছেআল্লাহ বলেন-নিশ্চয় যারা স্বীয় ধর্মকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং অনেক দলে বিভিক্ত হয়ে গেছে,তাদের সাথে আপনার[নবি(স)] কোন সম্পর্ক নেইতাদের ব্যাপার আল্লাহ তাআলার নিকট সমার্পিতঅতঃপর তিনি বলে দেবেন

No comments:

Theme images by Maliketh. Powered by Blogger.